জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন। হাদিসের ভাষ্যমতে এই দিনটি আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ দিন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সর্বোত্তম দিন হলো আরাফার দিন। (সহিহ ইবনে হিব্বান)


সহিহ ইবনে হিব্বানের অন্য একটি (হাসান লিগাইরিহি) বর্ণনায় আছে, মহান আল্লাহ আরাফার দিন দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, অতঃপর জমিনে বসবাসকারীদের নিয়ে আসমানবাসীদের সঙ্গে গর্ব করেন।


তিনি বলেন, আমার বান্দাদের দেখ, তারা হজের জন্য এলোমেলো চুল ও ধূলিময় অবস্থায় দূর দিগন্ত থেকে এসেছে। তারা আমার রহমত আশা করে, অথচ আমার আজাব দেখেনি। সুতরাং এমন কোনো দিন দেখা যায় না, যাতে আরাফার দিনের তুলনায় জাহান্নাম থেকে অধিক মুক্তি পায়। (সহিহ ইবনে হিব্বান)

পবিত্র আরাফার দিন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন।


নিম্নে তার কিছু ফজিলত তুলে ধরা হলো—


হজের প্রধান রুকন : হজ এমন একটি ইবাদত, যা মহান আল্লাহর কাছে কবুল হলে মানুষ নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। এর প্রতিদান জান্নাত। সেই হজ বলা হয়, মূলত আরাফার দিন আরাফার ময়দানে অবস্থানকে। এটা হজের মৌলিক রুকন।


আবদুর রহমান ইবন ইয়ামুর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে কয়েকজন লোক এসে তাঁকে হজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাই হজ (অর্থাৎ আরাফার ময়দানে অবস্থান করার নামই হজ)। অতএব, যে ব্যক্তি আরাফার পরবর্তী রাত পেয়েছে মুজদালিফার রাতের (দিনের) ফজর উদয়ের পূর্বে, তার হজ পূর্ণ হয়েছে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩০১৬)


জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন : মুমিনের জন্য এই দিনটি শ্রেষ্ঠ দিন। কারণ এই দিন বহুসংখ্যক মানুষকে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।


হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাহ দিবসের তুলনায় এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করেন এবং বলেন, তারা কী উদ্দেশে সমবেত হয়েছে (বা তারা কী চায়)? (মুসলিম, হাদিস : ৩১৭৯)

এই দিনে ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছে : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বিন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩)


হাদিসের ভাষ্যমতে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আরাফার দিনে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৪৪)


এই দিনের রোজায় গুনাহ মাফ হয় : আরাফার দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি। এই দিনের রোজাও বিশেষ ফজিলত বহন করেন। হাদিসের ভাষ্যমতে, এই দিনের রোজার মাধ্যমে আগে-পরের দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। প্রিয় নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছে, ‘আর আরাফার দিবসের রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৩৬)


দোয়া কবুলের দিন : আরাফার দিন দোয়া কবুলের দিন। তাই নবীজি (সা.) এই দিনকে দোয়ার উত্তম দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আরাফার দিনের দোয়াই উত্তম দোয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮৫)


অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই দিনে মহান আল্লাহকে খুশি করার (সাধ্যমতো) সব পন্থা অবলম্বন করা। রোজা রাখা। বেশি বেশি দোয়া-জিকির ও তাওবা-ইস্তেগফার করা। তাকবিরে তাশরিকের আমল করা। 


মোবারক এই দিনে যেন গুনাহ সংঘটিত না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।