কক্সবাজারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরকে শিপিং হাবে পরিণত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। যার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বরাদ্দ চেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় দ্বিগুণ হতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় থাকা মোংলা বন্দরের উন্নয়ন বাজেটে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪৫ গুণ বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। মাতারবাড়ীকে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেহেতু চট্টগ্রাম ও মোংলা এই দুটি পুরোনো বন্দরের পানির গভীরতা বড় সমুদ্রগামী জাহাজের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকার মোংলা বন্দর পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বর্তমানে দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা ও লজিস্টিক সমস্যার কারণে অপ্রতুলভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ ও বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।


পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আসন্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ১০ হাজার ৪৩০ বিলিয়ন টাকা বরাদ্দ চেয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সরকার এ খাতে ৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাতারবাড়ী ও মোংলা বন্দরের উন্নয়নকাজে বড় অঙ্কের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, কারণ এই দুটি বন্দর আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিশেষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘মোংলা বন্দর বহু দশক ধরে সমস্যায় থাকায় আমরা এটি পুনরুজ্জীবিত করতে চাই, যাতে বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সংযোগ বিশেষ করে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সম্প্রসারিত করা যায়।’


তিনি জানান, মাতারবাড়ী বন্দর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক লাইফলাইন হবে, কারণ এটি বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনের আন্তর্জাতিক ট্রান্সপোর্ট হাবে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর উন্নয়নের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সরকার মোংলা বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানের বৈদেশিক বাণিজ্যের অনুমতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি। ‘আমরা এই বন্দরের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে নতুন রেললাইন নির্মাণ করেছি, বিদ্যমান সড়ক ও সেতু সম্প্রসারণ করেছি। এখন আমরা লজিস্টিক সুবিধা উন্নয়নে কাজ করছি’-  বলেও জানান তিনি।


তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী থেকে কক্সবাজার শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী চলমান সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে মন্ত্রণালয়। মোংলা বন্দর উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে ৬১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। চলতি এডিপিতে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া পায়রা বন্দর উন্নয়নের জন্যও বেশি বরাদ্দ চেয়েছে মন্ত্রণালয়। পায়রা বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা উন্নয়ন প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ২৬০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে, যেখানে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল ৮৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।