‘হিকমত’ হলো আল্লাহর দ্বিন সম্পর্কে গভীর বোধ ও সঠিক বুদ্ধিবৃত্তি। এটি হলো জ্ঞান, তাকওয়া ও আমলের নিখুঁত সমন্বয়। জীবনের প্রতিটি বিষয়েই হিকমত প্রয়োজন। হিকমত মানে প্রতিটি বিষয়কে যথোপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা, প্রতিটি বিষয়কে তার যোগ্য মর্যাদায় মূল্যায়ন করা, যেখানে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন সেখানে সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া, আর যেখানে থেমে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ সেখানে থেমে যাওয়া।


মহান আল্লাহ তাঁর নবী-রাসুলদের এই নিয়ামত পরিপূর্ণভাবে দিয়েছেন। এমনকি পবিত্র কোরআনে এই শব্দটি কখনো কখনো নবুয়ত ও রিসালত অর্থেও এসেছে। যেমন পবিত্র কোরআনে ঈসা (আ.) সম্পর্কিত আলোচনায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি তাঁকে কিতাব, হিকমত, তাওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দেবেন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৪৭)


আর দাউদ (আ.) সম্পর্কিত আলোচনায় এসেছে, ‘আমি তাঁর রাজত্বকে সুদৃঢ় করেছিলাম, আর তাঁকে দিয়েছিলাম ‘হিকমত’ (জ্ঞান-বুদ্ধি-বিচক্ষণতা) আর বিচারকার্য ও কথাবার্তায় উত্তম সিদ্ধান্তদানের যোগ্যতা। (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ২০)


তবে ‘হিকমত’ শুধু নবুয়তের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি নবুয়তের চেয়েও ব্যাপকতর একটি গুণ। হিকমতের সর্বোচ্চ রূপ হলো নবুয়ত ও রিসালত, তবে নবীদের অনুসারীরাও অনুগ্রহস্বরূপ এর কিঞ্চিত অংশ লাভ করে থাকেন।


পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই নিয়ামতের ব্যাপারে বলেন, ‘তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেওয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেওয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৯) 


মহানবী (সা.)-ও এই নিয়ামত সর্বোত্কৃষ্ট নিয়ামত বলে আখ্যা দিয়েছেন। এবং এই নিয়ামতের ব্যাপারে ঈর্ষা করা জায়েজ বলেছেন। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি কেবল দুই ধরনের ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা রাখা যেতে পারে। একজন এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায় পথে তা ব্যয় করার মতো ক্ষমতাবান করেছেন। অন্যজন এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ দ্বিনের জ্ঞান (হিকমত) দান করেছেন (আর তিনি) সে অনুযায়ী ফয়সালা দেন ও অন্যদের তা শিক্ষা দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪০৯)


তাই এই মহামূল্যবান নিয়ামত অর্জন করার চেষ্টা করা এবং অর্জন হলে তার শুকরিয়া আদায় করা প্রতিটির মুমিনের জন্য আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি লোকমানকে হিকমত দান করেছিলাম। (তাঁকে বলেছিলাম), তুমি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা নিজের কল্যাণেই করে। আর কেউ অকৃতজ্ঞ হলে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১২)


হিকমত দিয়ে মানুষকে আলোর পথে আনা যায়। তাই মহান আল্লাহ মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করার ক্ষেত্রেও হিকমতের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক কর।’  (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)


এতে ইসলামের সৌন্দর্য যেমন ফুটে উঠবে, তেমনি মানুষ ইসলামের পথে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে।


তাই মুমিনের উচিত, মহান আল্লাহর কাছে এই অমূল্য নিয়ামতের জন্য দোয়া করা। এই অমূল্য নিয়ামত অর্জনের চেষ্টা করা। সন্তান-সন্ততিকেও যেন মহান আল্লাহ এই নিয়ামত দেন, তাদের জন্য দোয়া করা। আমাদের নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবির জন্য হিকমতের দোয়া করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাকে তাঁর বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন— উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আল্লিমহুল হিকমাতা। অর্থ : হে আল্লাহ, তাকে হিকমত শিক্ষা দিন। (বুখারি, হাদিস : ৩৭৫৬)