ভারতে এবারের দীপাবলির উৎসব অনেকের জন্য বিষাদে পরিণত হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে নতুন একধরনের বিপদজনক বাজি। যে বাজি সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্বাইড গান নামে ঝড় তুলেছিল। সেই বাজিই এখন ভারত জুড়ে শত শত শিশুর দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণ হয়েছে। ভারতজুড়ে কমপক্ষে পাঁচটি রাজ্য থেকে এই কার্বাইড গান বিস্ফোরণে শিশু ও তরুণদের দৃষ্টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের অনেকেই স্থায়ীভাবে দৃষ্টি হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
মধ্যপ্রদেশের একটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে ১৫ বছরের আরিশ। তার বাম চোখ ঢেকে আছে কালো চশমায়, এক সপ্তাহ আগে একটি কার্বাইড গান মুখের কাছে বিস্ফোরিত হওয়ায় তার কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জরুরি অস্ত্রোপচার হলেও সে কতটুকু দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে, তা সময়ই বলবে।
দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে না যাওয়া এই কিশোরটি টেলিভিশন মেরামতের কাজ করার পাশাপাশি বাবার বাগানের কাজে সাহায্য করে। সে এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তিত কাজ হারানোর জন্য। আরিশের মতো আরও বহু শিশু এই একই কারণে হাসপাতালে ভর্তি।
কার্বাইড গান হলো ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে তৈরি এক ধরনের দেশীয় বাজি। সাধারণত একটি প্লাস্টিকের পাইপে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। জলের সংস্পর্শে এলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে অত্যন্ত দাহ্য অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন হয়। যা বিকট বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ অনেকটা গুলির শব্দের মতো। সমস্যা হলো, বিস্ফোরণটি অনিয়ন্ত্রিত ও প্রায়শই বিলম্বিত হয়। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিশুরা পাইপের ভেতরে কী হচ্ছে দেখতে উঁকি দেওয়ার সময়ই অনেক ক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের ফলে রাসায়নিক কণা ও গরম গ্যাস চোখে আঘাত করে, যার ফলে ত্বক পোড়া এবং কর্নিয়াসহ চোখের ভেতরে রাসায়নিক ও তাপীয় আঘাত সৃষ্টি হয়।
এই 'কার্বাইড গান' ভারতের স্থানীয় বাজারগুলোতে নতুন কিছু না। কৃষকরা মাঝে মাঝে ক্ষেত থেকে পশু তাড়াতে এটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু সম্প্রতি ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে এটিকে বাজি হিসেবে ব্যবহার করার বহু ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই এর বিক্রি বহুগুণ বেড়ে যায়। দেদারছে বিক্রি হয়েছে ১৫০-২০০ রুপিতে। সস্তা কিন্তু শক্তিশালী হওয়ায় বাজির বিকল্প হয়ে ওঠে এই ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকটি।
মধ্যপ্রদেশের ভোপাল জেলাতেই ১০০টিরও বেশি কার্বাইড গান জনিত আঘাতের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। যার মধ্যে কমপক্ষে ১৫ জনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়েছে। বিহার রাজ্যেও ১৭০টি এমন দুর্ঘটনার কথা জানা গেছে। ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতেও এমন খবর মিলেছে।
হামিদিয়া হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান ডা. কবিতা কুমার বলেছেন, আঘাতের তীব্রতা দেখে তারা স্তম্ভিত। চোখে রাসায়নিক ও তাপীয় আঘাতের ফলে অনেকেরই স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। রোগীর অভিভাবক আফরিন জানান, তার ছেলে আলজাইনের বয়স ৭ বছর। সে ইউটিউব দেখে বায়না ধরে এই বন্দুক কিনেছিল। এখন তিনি ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।
ভারতের ক্যালসিয়াম কার্বাইডের বিক্রি ও ব্যবহার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও এটি ফল পাকানোর মতো কাজে অবৈধভাবে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।
এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মধ্যপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্য কার্বাইড গানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কিছু বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অল ইন্ডিয়া অপথ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ডাঃ পার্থ বিশ্বাস জরুরি ভিত্তিতে এই বন্দুক দেশব্যাপী নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি এটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
EzWQxbhuhYCmhmnunlBusAC
zQhgwJiWmcxwirJzbCnj